ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্ম ও মাদ্রাসা শিক্ষা

Spread the love

লেখালেখি করার অদম্য ইচ্ছা কিন্তু সেরকম ধৈর্য ও পড়ালেখা কিছুই করতে পারি নাই। তবুও অনেক দুঃসাহস নিয়ে লেখাটি লিখেছি। পাঠক, আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।

ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ভারত বর্ষ

ভারত বর্ষ ৬ সহস্র বছর আগে থেকেই বিদেশী বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল। বিদেশী বণিকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল ভারত বর্ষ।

যখন আরব উপদ্বীপে ইসলাম আবির্ভাব হয়নি তার শত শত বছর আগে খেজুর বাণিজ্যের জন্য বর্তমান মুম্বাইয়ে আরবেরা আসে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় ইসলামের আগমন ঘটে।

ভারত বর্ষে ১ম ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব

আরব বণিকরা ভারতবর্ষে প্রথম ইসলাম ধর্ম নিয়ে আসেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জীবন কালে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইয়ের মালাবার এর প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।

পরবর্তীকালে এগারো থেকে সতেরো শতকে তুর্কি মুঘল ও আফগান শাসকদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে মুসলিম শিক্ষার প্রসার লাভ করে। 

Nano Computer

ভারতীয় উপমহাদেশে গত দুইশো বছরে মাদ্রাসা শিক্ষা ইসলামি জ্ঞান সম্পন্ন ও পণ্ডিত তৈরীর কাজে ও ধর্মীয় কার্যাবলীর মধ্যে সীমিত ছিল। এদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের বাইরে বিপরীতধর্মী কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা সমালোচিত হয়েছে। 

ইসলামী শিক্ষার প্রাথমিক যুগে মসজিদে শিক্ষা দেওয়া হত। কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি আগ্রহী যুবকদের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। মাদ্রাসা একটি আরবি শব্দ যা কোন স্কুল বা ধর্মনিরপেক্ষবাদ ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

মাদ্রাসার অনূদিত শব্দগুলো মাদ্রাসাই, মাদ্রাসা, মোদরাসা মাদ্রাজা ইত্যাদি। ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ফেস শহরে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া আল করাইন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো মাদ্রাসা। 

ভারতীয় উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা

ভারতীয় উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার কালানুক্রম ১০০০থেকে ১২০০ তুর্কি শাসন আমল। ইলবারতি কাল ১০০৬ থেকে ১২৯০খিলজী যুগ ১২৯০থেকে ১৩২০ লোদি যুগ ১৪১৪ থেকে ১৫২৬মুঘল শাসনামল ১৫২৬ থেকে ১৭৫৭ এবং ইংরেজ শাসনামল ১৭৫৭থেকে ১৯৪৭। 

প্রাথমিক তুর্কি যুগে মাহমুদ গজনবীর পুত্র সুলতান মাহমুদ মক্তব-মাদ্রাসা সহজ চমৎকার সরকারি ভবন নির্মাণ করেন। এ সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। মুহাম্মদ ঘুরীর শাসনামলে একাধিক মাদ্রাসা নির্মাণ ও ফিকাহ শিক্ষার বিস্তার ঘটে।

দিল্লির সুলতানদের ১২০৬ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রথম বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করে। যা ধর্মীয় ও নিরপেক্ষ শিক্ষার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল।

এছাড়া মাদ্রাসা, মসজিদ, নাসিরিয়া প্রভৃতি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাদিস তাফসির আরবি সাহিত্য ব্যাকরণ ইসলামী আইন ইসলামী তথ্য যুক্তিবিদ্যা এবং গ্রীক দর্শন পড়ানো হতো। এক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যম ছিল আরবি। 

সুলতানি আমলে যখন দিল্লি আলাউদ্দিন খিলজির অধীন ছিল তখন ৪৫জন কলা এবং বিজ্ঞানের ব্যক্তি বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। সুলতান মুহাম্মদ লোকের সময় দিল্লিতে এক হাজারের মতো মাদ্রাসা ছিল।

নদীর শাসনামলে ১৪১৪থেকে ১৫২৬ মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। রাজা মুহাম্মদ কুলি, কুতুব শাহ চার মিনার নির্মাণ করেন এবং এর ভেতরে মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। 

সুলতান ইব্রাহিমের শাসনামলে ১৪০২থেকে ১৪৪০ জৈনপুর শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সুলতান মাহমুদ খিলজী শিক্ষা ও সাহিত্যের একজন বড় পথপ্রদর্শক ছিলেন। তিনি রংপুরে মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে তাদেরকে কলা ও হস্তশিল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। 

মুঘল শাসকদের মধ্যে বাবর জৈনপুরী আজিজুল্লাহ মাদ্রাসা হুমায়ুন যমুনা নদীর তীরে মাদ্রাসা জাগানিয়া শেরশাহ নড়নাইলে একটি বড় ভবনের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। 

সম্রাট আকবর মক্তব মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য ব্যতিক্রম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিন্দু মুসলমান সবার শিক্ষার ব্যাপারে সমান আগ্রহী ছিলেন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছিলেন। 

আকবরের সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষায় নৈতিকতা, পাটিগণিত, কৃষি, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, গৃহব্যবস্থাপনা, সরকারের শাসন নীতি, ওষুধ, যুক্তিবিদ্যা, বিজ্ঞান, ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত ছিল। আকবর মুসলিম বালকদের সাথে মাদ্রাসায় হিন্দুদের শিক্ষিত করার মত উদারনীতি অবলম্বন করেছিলেন। 

বাংলায় উচ্চশিক্ষার জন্য মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছিল গৌর পান্ডুয়া দাস বাড়ি, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, সিলেট সোনারগাঁ প্রভৃতি অঞ্চলে। 

ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে মাদরাসা শিক্ষা

ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ মাদ্রাসা শিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ে। এ সময় ভারতে যারা মুসলিম বিরোধী যারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল তাদের আন্দোলনকে গতিশীল করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।

এ কারণে অনেক মক্তব-মাদ্রাসা ব্রিটিশ সরকারের সমর্থনের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। 

১৭৮০ সালে লর্ড হেস্টিং মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে বৈরিতা এড়াতে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যা সরকারি ভাবে পরিচালিত হয়েছিল। আলিয়া মাদ্রাসার পাঠক্রমে বিজ্ঞান গণিত ভাষা ফিকহ কালাম ও তফসির অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পরবর্তীতেও কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ১৫০ বছরের অধিক সময় মাদ্রাসাটি ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিল। পোষ্ট আপনার কাছে ভাল লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।

লিখেছেন: নুরুন্নবী মোস্তফা
সহকারী শিক্ষক (বাংলা)
পি.এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
জিঞ্জিরা, ঢাকা